রাবিতে শিক্ষকদের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপি-জামায়াত - .

.

.

Loading...

Breaking

Home Top Ad

loading...

Post Top Ad

Tuesday, April 24, 2018

রাবিতে শিক্ষকদের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপি-জামায়াত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত সিনেট, সিন্ডিকেট, শিক্ষক সমিতি, ডিনসহ ৭ ক্যাটাগরির নির্বাচনে ৭০টি পদের মধ্যে ৬৬টি পদে প্রার্থী দিয়ে ৩২টি পদেই বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি- জামায়াতপন্থী ‘জাতীয়তাবাদী ও ইসলামে মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ (সাদা প্যানেল)’। অন্যদিকে, ৭০টি পদেই প্রার্থী দিয়ে ৩৮টি পদে জয়ী হয়েছে আওয়ামীপন্থী ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল)।’
তবে হলুদ প্যানেলের জয় করা পদগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিল অগুরুত্বপূর্ণ। সাত ক্যাটাগরির নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পেয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা প্যানেল।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সিনেট ক্যাটাগরির ৩৩টি পদের মধ্যে ১৯টি পদই পেয়েছে সাদা প্যানেল। আর হলুদ প্যানেল পেয়েছে ১৪টি। শিক্ষক সমিতি ১৫টি পদের নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়াও দুটি সদস্য পদ পেয়েছে সাদা প্যানেল। অন্যদিকে, শুধুমাত্র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আটটি সদস্যপদে নির্বাচিত হয়েছে হলুদ প্যানেলের শিক্ষকরা।
ডিন ক্যাটাগরিতে ৯টি পদের মধ্যে একটি পদে প্রার্থীই দিতে পারেনি সাদা প্যানেল। ফলে সেটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে হলুদ প্যানেলের সদস্যরা। বাকি আটটির মধ্যে চারটিতে জিতেছে হলুদ প্যানেল ও চারটিতে জিতেছে সাদা প্যানেল।
সিন্ডিকেট ক্যাটাগরির নির্বাচনে পাঁচটি পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিন পদ প্রাধ্যক্ষ, অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতেই নির্বাচিত হয়েছে সাদা প্যানেল থেকে। কেবল সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে জিতেছে হলুদ প্যানেল থেকে। আর প্রভাষক ক্যাটাগরিতে প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে হলুদ প্যানেল।
তবে শিক্ষা পরিষদ, ফাইনান্স এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে কোন পদেই বিজয়ী হয়নি সাদা প্যানেল। আটটি পদেই জয়লাভ করেছে হলুদ প্যানেল। এর মধ্যে শিক্ষা পরিষদ ক্যাটাগরির ছয়টি পদের বিপরীতে মাত্র চারটি পদে প্রার্থী দিতে পেরেছিল সাদা প্যানেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে আওয়ামীপন্থী ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার অর্থাৎ হলুদ প্যানেলের নিবন্ধিত শিক্ষক সংখ্যা ৬৬০ জন। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতপন্থী নিবন্ধিত শিক্ষক সংখ্যা ৪২৫ জন। তবে নিবন্ধনের বাইরেও কিছু শিক্ষক রয়েছে। যার সংখ্যা নেহায়েত কম। সর্বমোট ১ হাজার ১৫৮জন ভোটারের মধ্যে ৭৩জন শিক্ষক কোন দলেই নিবন্ধন করা নেই। সাদামাটা হিসেবে হলুদ প্যানেলের নিরঙ্কুশ বিজয় হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। অর্থাৎ এতে স্পষ্ট হয় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ভোটেই জয়লাভ করেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, এবার শিক্ষক সমিতির সর্বমোট ১ হাজার ১৫৮জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ১৩ জন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে হলুদ প্যানেলের অধ্যাপক পিএম সফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৩৫২ ভোট, অন্যদিকে সাদা প্যানেলের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন পেয়েছেন ৬২০ ভোট। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে হলুদ প্যানেলের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম পেয়েছেন ৪৬৫ ভোট, অন্যদিকে সাদা প্যানেলের অধ্যাপক মামুনুর রশীদ পেয়েছেন ৫১৪ ভোট। এছাড়া সিনেট নির্বাচনে প্যানেল ভোট (সবগুলো ভোট এক প্যানেলকে দেয়া) বেশি পেয়েছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের বেশ কয়েকজন শিক্ষকই হলুদ প্যানেলের এই হারের পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন অনুসারী শিক্ষকদের গ্রুপিংকে। এই ‘শীতল সম্পর্কের’ কারণে প্রগতিশীল শিক্ষকদের অনেকেই বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের ভোট প্রদান করে বিজয়ী করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হলুদ প্যানেলের ব্যাপারে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু বলেন, ‘প্রথমত বলবো আদর্শের ঘাটতি নেই। বরং একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যকার অভিমান, তৃণমূল অর্থাৎ জুনিয়র শিক্ষকদের মতামতের মূল্য না দেয়া এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও এলাকাকেন্দ্রিক বিভাজনের ফলে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। আর স্টিয়ারিং কমিটিরও কিছু পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রার্থীতা নিয়ে কথা উঠেছে। তবে বড় বিষয় হলো নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি।’
সাদা প্যানেল থেকে প্রাধ্যক্ষ পদে বিজয়ী হওয়া মাদার বখস হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল আলিম নিজেদের জয়ের কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘প্রথমত আমরা খুবই শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছিলাম। এছাড়া বর্তমান প্রশাসন এককভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার দরুণ অনেক শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। এতে ওইসব শিক্ষকরা আমাদের ভোট দিয়েছেন। এছাড়া হলুদ প্যানেলের স্টিয়ারিং কমিটির অনেকেই প্রার্থী হয়েছিল। সাধারণত স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা খুব সমস্যা না হলে প্রার্থী হয় না। এটি নিয়েও তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিলো বলে শুনেছি। সব মিলিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ব্যালটে প্রতিফলিত হয়েছে।’

No comments:

Post Bottom Ad

loading...

Pages