বিশ্বকাপ মানেই তুমুল উত্তেজনা। বিভিন্ন দেশের ফুটবলাররা নিজেদের কলাকৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্বকাপের মঞ্চকে স্মরণীয় করে রাখেন। লেখা হয় নতুন রূপকথা, নতুন ইতিহাস। জন্ম হয় স্মরণীয় সব মুহূর্তের। ফুটবলাররা দারুণ সব মুহূর্তের জন্ম দিয়ে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরেন বিশ্বসেরার এই মঞ্চে। তবে এমন বড় আসরে মনে রাখার মতো চোখ ধাঁধানো কলাকৌশল যেমন থাকে, ঠিক তেমনি দৃষ্টিকটু অনেক ঘটনারও জন্ম দেয়। বিশ্বকাপের বিতর্কিত ১১টি ঘটনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেতন। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপ বিতর্কের একাদশে কারা জায়গা করে নিলেন :
১. ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’
বিশ্বকাপের আসরের অন্যতম বিতর্কিত ঘটনাটির জন্ম হয় ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে। ওই আসরের কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা চলছিল ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। তৎকালীন আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে লেগে বল জড়িয়ে গিয়েছিল জালে। শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে সেমিফাইনালে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার এই হাত দিয়ে গোল করার বিষয়টি রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। ফলে বড় শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি। আর শেষমেশ ওই আসরের বিশ্বকাপ শিরোপাটাও শোভা পায় ম্যারাডোনার হাতেই।
২. একই ফুটবলারের তিন হলুদ কার্ডপ্রাপ্তি
২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ইংলিশ রেফারি গ্রাহাম পল একই খেলোয়াড়কে এক ম্যাচে তিনবার হলুদ কার্ড দেখান। ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড় জসিপ সিমোনিক ম্যাচের ৬১ ও ৯০ মিনিটে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে বাজেভাবে ফাউল করেন। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের পরও রেফারি তাঁকে মাঠের বাইরে পাঠাননি। কিন্তু ম্যাচের ৯৩ মিনিটে আবার ফাউল করলে সিমোনিককে হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে পাঠান রেফারি।
৩. দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচ ফিক্সিং
২০০২ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া জড়িয়ে পড়ে ফিক্সিংয়ের মতো ঘৃণ্য কাজে। নকআউট পর্বের ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া বেশ কিছু সুবিধা পায়। ওই ম্যাচে রেফারি ইতালির একটি গোল বাতিল ঘোষণা করেন এবং ঝাঁপ দেওয়ার কারণে ফ্রান্সেসকো টট্টিকে মাঠের বাইরে পাঠান। রাউন্ড ১৬-এর ম্যাচ ২-১ গোলের ব্যবধানে জিতে নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। পরের ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষেও রেফারি দুটি বৈধ গোল বাতিল করেন। রেফারির সাহচর্যে দক্ষিণ কোরিয়া ৫-৩ গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়।
৪. ইংল্যান্ড বনাম পশ্চিম জার্মানি ফাইনাল
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও পশ্চিম জার্মানি ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ম্যাচের ১০১তম মিনিটে ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার জিওফ হার্স্ট ক্রসবার লাইন থেকে বলে আঘাত করে গোল করেন। কিন্তু এই গোলের ব্যাপারে রেফারি ও লাইন্সম্যান ভিন্ন মত পোষণ করেন। রেফারির মতে, বলটি গোলবারের লাইন অতিক্রম করেনি, অন্যদিকে লাইন্সম্যানের মতে বলটি গোলবার অতিক্রম করেছে। এই ব্যাপারে অনেক বছর ধরেই বিতর্ক চলছিল। এটা কি গোল হয়েছিল, নাকি হয়নি?
৫. সান্তিয়াগো যুদ্ধ
১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে চিলি ও ইতালির মধ্যকার ম্যাচে ঘটে ন্যক্কারজনক ঘটনা। দুই দলই একে অপরকে ফাউল করার চেষ্টায় থাকে। ম্যাচের প্রথম ফাউলের ঘটনা ঘটে ম্যাচের ১২ সেকেন্ডেই। ১২ মিনিটের মাথায় মাঠের বাইরে পাঠানো হয় এক খেলোয়াড়কে। কিল, ঘুষি, চড় কোনো কিছুই বাদ ছিল না এই ম্যাচে। তিনবার পুলিশের হস্তক্ষেপ করা এই ম্যাচ ০-২ ব্যবধানে জিতে নেয় চিলি।
৬. আলজেরিয়ার বিপক্ষে পশ্চিম জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার ষড়যন্ত্র
১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে আলজেরিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পায়। ফুটবল বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে তারা ফেভারিট পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়। গ্রুপ পর্বের ফাইনাল ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি জানত, যদি তারা ১-০ গোলের ব্যবধানে জিতে যায়, তবে তারা ও অস্ট্রিয়া নকআউট পর্বে যেতে পারবে এবং আলজেরিয়া টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়বে। যার ফলে এক গোল করার পর পশ্চিম জার্মানি স্কোর লাইন ঠিক রাখার জন্য ম্যাচের পুরোটা সময় অযথাই নষ্ট করে। যদিও আলজেরিয়া এ ব্যাপারে প্রতিবাদস্বরূপ ফিফার কাছে অভিযোগ দিয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। আলজেরিয়াকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়তে হয়।
৭. ১৯৭৮ বিশ্বকাপ কি নির্ধারিত ছিল?
১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের শিরোপা জয় কি পূর্বনির্ধারিত ছিল? এই টুর্নামেন্টের অনেক ঘটনাই জানান দেয়, আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় পূর্বনির্ধারিত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় রাউন্ডের গ্রুপ পর্বের ফাইনাল ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে পেরুর বিপক্ষে ৪-০ গোলের ব্যবধানে জিততে হতো, যাতে ফাইনালে ব্রাজিলের পরিবর্তে তারা ফাইনাল খেলতে পারে। আর্জেন্টিনা ওই ম্যাচ জিতে নেয় ৬-০ গোলের ব্যবধানে।
৮. পশ্চিম জার্মানি বনাম ফ্রান্স ম্যাচ
৯. ইতালির বিপক্ষে ফ্রান্সের ফ্যাসিবাদ
১৯৩৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ইতালি সাদা জার্সি পরতে বাধ্য করা হয়, কারণ ওই ম্যাচে ফ্রান্স নীল জার্সি পরেছিল। ওই বছর ফ্রান্স বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ ছিল। অবশ্য ইতালি কালো জার্সি পরে মাঠে নেমেছিল, যার অর্থ তারা ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করে।
১০. গোল হয়েও গোল না
২০১০ সালের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ইংল্যান্ড ও জার্মানির মধ্যকার ম্যাচে ঘটে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ডি-বক্সের বাইরে থেকে বলে আঘাত করে। বলটি গোলরক্ষকের ম্যানুয়েল ন্যুয়ারের হাত গলে গোলবারের ক্রসলাইন অতিক্রম করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলটি আবার লাইনে ফিরে আসে এবং গোলরক্ষক তালুবন্দি করেন।
১১. বিশ্বকাপ চুরি
ইংল্যান্ড থেকে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের শিরোপা চুরি হয়েছিল! প্রদর্শনীর জন্য রাখা শিরোপাটি ওয়েস্টমিনস্টার সেন্ট্রাল হল থেকে চুরি হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারি থাকলেও শিরোপাটি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন তারা।
No comments:
Post a Comment