আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও র্যাবের মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ দিনে মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে ৩৮জনের নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে তিন শতাধিক সন্দেহভাজনকে। গোপন খবরের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করেছে র্যাব।
নিহত সবাই মাদক-ব্যবসা এবং মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এবং চিহ্নিত অপরাধী বলে জানায় নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় এক বা একাধিক মামলা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
নিহত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে পুলিশ পাল্টা গুলি চালানোর অভিযোগ করলেও এক নিহতের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামীর কাছে কখনো কোন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না।
''সে কোনদিন পিস্তলের চিহারাও দেখে নি - এগুলা মিথ্যা,'' বলেন চুয়াডাঙ্গায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত কামরুজ্জামান সাজুর স্ত্রী নাসরিন খাতুন।
''এলাকাবাসী বলবে - সে নিশা করত এটা অস্বীকার করার মত কিসু নাই -কিন্তু সে অস্ত্র, গুলি কিসুই চিনে না।''
তিনি বলেন তার স্বামী আগে এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু চার মাসে আগে তাকে অ্যারেস্ট করার পর তিনি পুলিশকে মুচলেকা দিয়া বাড়িতে বসে আছেন। পুলিশের কাছে তিনি অঙ্গীকার করে এসেছেন তিনি নিজেওএর সঙ্গে জড়িত থাকবেন না- কেউ ব্যবসা করলে পুলিশকে জানাবেন।
''আমরা যখন যেটুক শুনসি তাই তাদেরকে বলসি- এখন এইভাবে ডাকি নিই যাই তারা আমার স্বামীরে মারি ফেলিসে।''
বাংলাদেশে এখন অন্য সব মাদক ছাড়িয়ে গেছে ইয়াবার ব্যবহার।
পুলিশের দাবি মাদক চোরাচালানের খবর পেয়ে তারা যখন গ্রেফতার অভিযান চালাতে যায় তখন অভিযুক্তরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এ অবস্থায় পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ কারণেই এই নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন চুয়াডাঙ্গার কোতোয়ালি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবীব।
''যখন চোরাকারবারিরা পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে গুলি চালিয়েছে স্বাভাবিকভাবে আমরাও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাই। সেই অধিকার আমাদের আছে। তবে নিরস্ত্রদের ওপর গুলি চালানোর যে অভিযোগ উঠেছে সেটা সম্পূর্ণ মনগড়া। যারা এমন অভিযোগ করছে তাদের কেউই ঘটনাস্থলে ছিল না,'' বলেন মি: হাবীব।
তবে পুলিশের এমন দাবি অস্বীকার করেছেন চুয়াডাঙ্গায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত কামরুজ্জামান সাজুর স্ত্রী নাসরিন খাতুন। রোববার তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন:
নিহতের স্ত্রী নাসরিন খাতুন জানান তার স্বামী আগে মাদক সেবন করলেও সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তিনি সব ছেড়ে দেন।
''আমার স্বামী দারোগারে বলসিল- ভাই আমাদের ভাল হওয়ার সুযোগ দিয়েন- আমরা একটা অটো কিনি চালাব। আমরা আর কুনো মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকব না । আমি একটু হিরোইন খাওয়া ধরিছি বলি আমি এ ব্যবসার সাথে জড়ায়ে গেসিলাম । আমরা আর এসব করব না। আমাদের ভাল হওয়ার সুযোগ দেন।''
বিবিসি বাংলাকে নাসরিন খাতুন বলেন, ''আমার স্বামী তো ভাল হতে চাইল, তাহলে তাকে কেন ভাল হইতে দেয়া হইল না।''
পুলিশ কয়েকবার কামরুজ্জামানকে থানায় ডেকে পাঠিয়েছিলো বলে তিনি জানান। সবশেষ রোববার তিনি থানায় যাওয়ার কথা বলে আর ঘরে ফেরেননি।
''থানায় যাওয়ার পর থেকে তার ফোন আর খুলা পাই নাই। ফোন বন্ধ। বিভিন্ন জাগায় খোঁজ করিছি - তারে পাই নাই। পরে টিভিতে খবর দেখে জানতে পারি পুলিশ আমার স্বামীরে মারি ফেলিসে।''
মাদক নির্মূল অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার এসব ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি মানবাধিকার কর্মীদের৷ মাদক প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানালেও এতে যেন আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয় সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তারা।
No comments:
Post a Comment