রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাসায় প্রায় দুই বছর ধরে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নিজের মেয়েকে জোর পূর্বক ধর্ষন করার অভিযোগে আনোয়ার শাহাদাৎ ওরফে শিশির (৪০) নামের পাষন্ড বর্বর এক বাবাকে আটক করেছেন রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনটি বিয়ে করা শিশির দীর্ঘদিন ধরে নিজের ঔরসজাত মেয়েকে জোর পূর্বক নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে অচেতন করে ধর্ষন করে আসছেন বলে ধর্ষনের শিকার মেয়ে ও তার সৎমা পুলিশকে জানায়। এরপর গতকাল রাত ৮টার দিকে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।
শিশির নরসিংদী থেকে বিয়ে করা প্রথম স্ত্রীর রয়েছে তিনটি মেয়ে সন্তান। সে ঘরের বড় মেয়েটির বয়স এখন ১৪ বছর। মেয়েটির মাকে তাড়িয়ে দেয়ার পর মেয়েটি বাবার সাথে থাকতো রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনার ভাড়া বাসায়। মেয়েটির মাকে তাড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন শিশির দিনাজপুরের রুমা আকতারকে। তার ঘরেও রয়েছে একটি কন্যা সন্তান। এরপর তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মাগুরা থেকে এক নারীকে বিয়ে করে কিছুদিন সংসার করলেও সেটি বেশিদিন ঠিকেনি। তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। প্রথম স্ত্রী’র বড় মেয়েটি বর্তমানে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকায় রাইজিং সান কেজি স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে মেয়েটিকে সর্বশেষ জোরপূর্বক ধর্ষন করার পর তার সৎমা রুমা আকতার ও মেয়েটি ঘটনা এলাকাবাসীর কাছে ফাঁস করেন।
এরপর এলাকার লোকজন ধর্ষনের শিকার মেয়েটি ও তার সৎমাকে উদ্ধার করে বর্বর পিতা আনোয়ার শাহাদাৎ শিশিরকে আটক করে সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়া থানায় নিয়ে যান। ধর্ষিত মেয়েটি বাবার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষনের অভিযোগ এনে আজ রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ শিশিরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপরাধ স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়। বর্বর পিতা শিশির নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার মাইজদীর রাজগঞ্জ এলাকার মৃত এনামুল হক সেলিমের পুত্র। সে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকায় ম্যাস্ট বুকস এন্ড ষ্টেশনারী নামের একটি লাইব্রেরীর ব্যবসা করেন এবং নবারুন প্রোডাক্টস নামের একটি প্রকাশনী সংস্থার বিক্রয় কর্মী হিসেবে চাকুরী করেন বলে জানা যায়।
শিশির দ্বিতীয় স্ত্রী রুমা আকতার ও ধর্ষনের শিকার প্রথম স্ত্রী’র বড় মেয়েটিকে সাথে নিয়ে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগানে ইউনুচ ট্রেডার্স বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। বিকৃত রুচির শিশিরের এধরণের অনৈতিক কাজের ঘটনা আশপাশের লোকজনও জেনে যান কিছুদিন আগে থেকে।
এ নিয়ে চন্দ্রঘোনা এলাকার কয়েকজন তাকে শাসালেও তাতে কোন কাজ হয়নি। সে ঘটনা বাইরের লোকজনকে জানানোর কারণে স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করেন। তাই শত নির্যাতনের পরও তারা ভয়ে মূখ খুলতে সাহস পেতোনা বলে জানান ধর্ষনের শিকার মেয়েটি।
শিশিরের দ্বিতীয় স্ত্রী রুমা আকতার জানান, শিশির আমাকে ও মেয়েটিকে অমানুষিক নির্যাতনের মধ্যে রেখেছেন। দেড় বছর আগে আমরা দুজন একবার পালিয়ে যায়। কিন্তু সে আর এসব করবেনা বলে ঢাকা থেকে আমাদের আবার ধরে নিয়ে আসেন। ধর্ষনের শিকার তার সৎ মেয়েটি বাবার নির্যাতনের কথা তাকে প্রায়শ জানাতো জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে শিশিরকে বললে সে আমাকে ও মেয়েকে মারধর করতো। মাঝে মাঝে নেশা জাতীয় পানিয় এনে মা মেয়েকে পান করিয়ে অচেতন করে রাখতো। এসময় মেয়ে এবং তার উপর বিকৃত নির্যাতন চালানো হতো বলে সে জানান।
চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকার ব্যবসায়ি ফরিদ আহমদ ও শহিদুল ইসলাম বলেন, শিশিরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কথা শুনে তাকে কয়েকবার শাসানো হয় এবং সংশোধন হতে বলা হলেও সে কর্ণপাত করেনি। সকালে ধর্ষনের শিকার মেয়েটির সৎমা ঘটনা আমাদের জানালে মা মেয়েকে সাথে নিয়ে শিশিরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভুঁইয়া বলেন, “বর্বর পিতা শিশিরকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, সে নিজের ঔরসজাত কন্যার সাথে জোর পূর্বক অনৈতিক কাজে জড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। এবং সে অনুতপ্ত বলে জানান। বুধবার (২৩ মে) ভিক্টিমের ডাক্তারি পরিক্ষা করানো হবে। ”
No comments:
Post a Comment