সিঙ্গাপুরে অভিবাসী নির্মাণশ্রমিকদের দুঃখগাথা - .

.

.

Loading...

Breaking

Home Top Ad

loading...

Post Top Ad

Sunday, April 22, 2018

সিঙ্গাপুরে অভিবাসী নির্মাণশ্রমিকদের দুঃখগাথা

নানা কর্মকাণ্ডে ব্যতিব্যস্ত এক ড্রপ ইন সেন্টার। সেখানে খাতায় সই করতে পুরুষদের লম্বা সারি। নাম সই করে প্রত্যেকে টোকেন নিচ্ছে। এ দিয়ে মিলবে বিনা মূল্যে খাবার। সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া ডিস্ট্রিক্টে সস্তার কয়েকটি হোটেলে এ টোকেন দিয়ে খাবার পাওয়া যাবে।
সারিতে দাঁড়ানো এই পুরুষেরা সবাই অভিবাসী নির্মাণশ্রমিক। তাঁরা এখন চাকরিহারা। অনেকে আবার বকেয়া বেতনের জন্য ঘুরছেন। এই সেন্টার চালায় অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু (টিডব্লিওসি২) নামের একটি সংস্থা। সেখানে প্রতি রাতে ৫০০ জনের বেশি মানুষ আসে।
সিঙ্গাপুরের অবকাঠামো খাতই দেশটির অর্থনীতিকে চাঙা করে রেখেছে। আর এর জন্য দেশটিকে প্রচুর বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে হয়। জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের জুনের এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন থেকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০ শ্রমিক এখানকার নির্মাণশিল্পে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছেন সরদার মো. ইনসান আলী। স্বপ্ন ছিল সিঙ্গাপুরের অবকাঠামো খাত তাঁর জীবনকে পাল্টে দেবে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুখের জীবন হবে তাঁর। গত বছর এই শহরে আসেন তিনি। বলা হয়েছিল, মাসে তাঁকে ১ হাজার ৬০০ সিঙ্গাপুরি ডলার দেওয়া হবে। বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ১ হাজার ৬৩৮ টাকা।
অথচ পৌঁছানোর পর তিনি দেখলেন, প্রতিদিন তাঁর মজুরি মাত্র ১৮ সিঙ্গাপুরি ডলার। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রথম আট মাস তাঁকে পুরো বেতন দিতে রাজি নয়। ইনসান আলী বলেন, মালিক মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ সিঙ্গাপুরি ডলার দিয়েছিল। এর মধ্য থেকে খুব অল্প নিজের জন্য রেখে বাকিটা দেশে পরিবারের কাছে পাঠাতেন।
তামেরা ফিলিংগারের কাছে এ এক পরিচিত গল্প। তিনি প্রতি বুধবারের টিডব্লিওসি২ ক্লিনিক সামলাতে সহায়তা করেন। কাজ করতে গিয়ে যেসব বিদেশি শ্রমিক আহত হন, ক্লিনিকটি তাঁদের সহায়তা দেয় এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব শ্রমিকের বেতন দাবি করে।
তামেরা বলেন, এসব শ্রমিকের দিনের পর দিন কেটে যায় কেবল মালিকপক্ষের আশ্বাসে। তাঁদের বলা হয়, কয়েক মাসের মধ্যে তাঁদের পুরো বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু অনেকেই মাসের পর মাস কোনো মজুরি পান না। বেশির ভাগ সময়ই এসব শ্রমিক প্রতারণার শিকার হন, কম মজুরি পান। যখন সব মালিকপক্ষ একসঙ্গে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের হাত গুটিয়ে নেয় অথবা প্রত্যাখ্যান করে, যখন শ্রমিকেরা বুঝতে পারে মালিকপক্ষের আশ্বাস শুধু আশ্বাসই, তখনই নিজেদের দাবিতে জেগে ওঠেন শ্রমিকেরা।
কাজ করার পরও অনেক অভিবাসী শ্রমিকের কপালে জোটে না ন্যূনতম মজুরি। প্রযুক্তির জন্য প্রসিদ্ধ সিঙ্গাপুর সিটিতে নিজের পাওনার জন্য সংগ্রাম করতে হয় তাঁদের।
সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৬ সালে তারা প্রায় সাড়ে চার হাজার নিয়োগকারীর বিরুদ্ধে বেতনসংক্রান্ত নয় হাজার অভিযোগ পেয়েছে। কর্মীদের মধ্যে স্থানীয় ও বিদেশি সবাই রয়েছেন।
সংসদীয় এক প্রশ্নের মুখে সিঙ্গাপুরের জনশক্তিমন্ত্রী লিম সুয়ে সে জানান, মধ্যস্থতা বা শ্রম আদালতের মাধ্যমে এসব মামলার ৯৫ শতাংশ সমাধান হয়। বেতন পরিশোধ না করায় গত তিন বছরে ১৫৮ জন নিয়োগকারী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
হিউম্যানিটারিয়ান অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইকোনমিকসের (হোম) নির্বাহী সমাজকর্মী জেভন এনজি বলেন, শাস্তির সংখ্যাটা কম। কারণ, সরকার তার ব্যবসাবান্ধব খ্যাতি বজায় রাখতে শাস্তির পরিবর্তে আপসকে প্রাধান্য দেয়। তিনি বলেন, নিয়োগকারীর বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার এবং শ্রমিকদের সঙ্গে বেতন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের একধরনের অনাগ্রহ কাজ করে।

No comments:

Post Bottom Ad

loading...

Pages